শিবপুরাণ – শিবপুরাণ-এ উল্লিখিত উপাখ্যান অনুসারে, পার্বতী একদিন নন্দীকে দ্বারী নিযুক্ত করে স্নান করতে যান। এমন সময় শিব সেখানে উপস্থিত হলে, তিনি নন্দীকে তিরষ্কার করে পার্বতীর স্নানাগারে প্রবেশ করেন। এতে পার্বতী অপমানিত ও ক্ষুব্ধ হন। অবশেষে সখী জয়া ও বিজয়ার সঙ্গে পরামর্শ করে তিনি জল থেকে পাঁক তুলে একটি সুন্দর পুত্রের মূর্তি নির্মাণ করেন ও সেই মূর্তিতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করে তাকে নিজের বিশ্বস্ত অনুচর নিয়োগ করেন। এরপর একদিন এই কুমারকে দ্বারী নিয়োগ করে পার্বতী স্নানে গমন করলে শিব তথায় উপস্থিত হন। কুমার শিবকে যেতে বাধা দেন। এতে প্রথমে প্রমথগণের সঙ্গে তার বিবাদ ও পরে পার্বতীর ইঙ্গিতে যুদ্ধ হয়। প্রমথগণ, শিব ও সকল দেবতা এই যুদ্ধে পরাজিত হন। তখন নারদের পরামর্শে বিষ্ণু কুমারকে মোহাচ্ছন্ন করেন ও শিব শূলের দ্বারা তাঁর মস্তক ছিন্ন করেন। এই সংবাদ শুনে পার্বতী ক্রুদ্ধ হয়ে বিশ্বসৃষ্টি বিনষ্ট করতে উদ্যোগী হন। নারদ ও দেবগণ তাঁকে শান্ত করেন। পার্বতী তাঁর পুত্রের পুনর্জীবন দাবি করেন ও ইচ্ছা প্রকাশ করেন যেন এই পুত্র সকলের পূজ্য হয়। কিন্তু কুমারের মুণ্ডটি তখন আর পাওয়া যায় না। শিব তখন প্রমথগণকে উত্তরমুখে প্রেরণ করেন এবং যাকে প্রথমে দেখা যাবে তারই মস্তক নিয়ে আসতে বলেন। তারা একটি একদন্ত হস্তিমুণ্ড নিয়ে উপস্থিত হন ও দেবগণ এই হস্তিমুণ্ডের সাহায্যেই তাঁকে জীবিত করেন। অনন্তর শিব তাঁকে নিজপুত্র রূপে স্বীকার করেন। দেবগণের আশীর্বাদে এই কুমার সকলের পূজ্য হন ও গণেশ নামে আখ্যাত হন। [51] স্কন্দপুরাণ – স্কন্দপুরাণ-এ গণেশের জন্ম বিষয়ে একাধিক উপাখ্যান বর্ণিত হয়েছে। এই পুরাণের গণেশ খণ্ডে আছে, সিন্দূর নামে এক দৈত্য পার্বতীর গর্ভে প্রবেশ করে গণেশের মস্তক ছিন্ন করে। কিন্তু এতে শিশুটির মৃত্যু ঘটে না, বরং সে মুণ্ডহীন অবস্থাতেই ভূমিষ্ট হয়। জন্মের পরে, নারদ এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে গণেশ তাঁকে ঘটনাটি জানান। নারদ এরপর তাকে এর একটি বিহিত করতে বললে, সে নিজের তেজে গজাসুরের মস্তক ছিন্ন করে নিজের দেহে যুক্ত করে। স্কন্দপুরাণ-এর ব্রহ্মখণ্ডে আছে, পার্বতী নিজের গাত্রমল থেকে একটি সুন্দর ও পূর্ণাঙ্গ পুতুল নির্মাণ করে তাতে প্রাণপ্রতিষ্ঠা করেন। এরপর পার্বতী তাঁকে নিজের স্নানাগারের দ্বাররক্ষকের দায়িত্ব অর্পণ করেন। শিব স্নানাগারে প্রবেশ করতে গেলে বালক-কুমার তাঁকে বাধা দেন। শিবের সঙ্গে তাঁর যুদ্ধ হয় ও শিব ত্রিশূলে তাঁর মস্তক ছিন্ন করেন। [52] এরপর গজাসুরকে সামনে পেয়ে শিব তার মস্তক ছিন্ন করেন তার মস্তক কুমারের স্কন্ধে যুক্ত করেন। স্কন্দপুরাণ-এর অর্বুদ খণ্ডে বলা হয়েছে, পার্বতী গাত্রমল দিয়ে একটি মুণ্ডহীন পুতুল তৈরি করেন। তারপর স্কন্দকে বলেন, পুতুলটির মাথা তৈরির জন্য একতাল কাদা আনতে; এই পুতুল হবে তাঁর ভাই। স্কন্দ কাদা না পেয়ে একটি হাতির মাথা কেটে আনেন। পার্বতী আপত্তি করলেও দৈবযোগে এই মুণ্ডটিই পুতুলের স্কন্ধে যুক্ত হয়। এরপর শক্তিরূপিনী পার্বতী পুতুলটির জীবনদান করেন। গজমুণ্ডযুক্ত পুতুলের দেহে এক বিশেষ নায়কের ভাব ফুটে ওঠে। এই কারণে শিবের বরে ইনি ‘মহাবিনায়ক’ নামে পরিচিত হন। শিব বলেন, এই কুমার গণাধিপতি হবে ও সকল কাজের আগে এঁর পূজা না করলে কার্যসিদ্ধি হবে না। স্কন্দ এঁকে অস্ত্র কুঠার দান করেন, পার্বতী দেন মোদকপূর্ণ সুগন্ধযুক্ত ভোজনপাত্র। মোদকের গন্ধে ইঁদুর এঁর বাহন হয়। বৃহদ্ধর্মপুরাণ – বৃহদ্ধর্মপুরাণ মতে, পার্বতী পুত্রলাভে ইচ্ছুক হলে শিব অনিচ্ছা প্রকাশ করেন। অগত্যা পার্বতীর পীড়াপীড়িতে শিব পার্বতীর বস্ত্র টেনে সেটিকেই পুত্রজ্ঞানে চুম্বন করতে বলেন। [53] পার্বতী সেই বস্ত্রকে পুত্রের আকার দিয়ে কোলে নিতেই সেটি জীবিত হয়ে ওঠে। তখন শিব পুত্রকে কোলে নিয়ে বলেন, এই পুত্র স্বল্পায়ু। উত্তরদিকে মাথা করে শায়িত এই শিশুর মস্তকও তৎক্ষণাৎ ছিন্ন হয়ে যায়। পার্বতী শোকাকুল হন। এমন সময় দৈববাণী হয় যে উত্তরদিকে মাথা করে শুয়ে আছে এমন কারোর মাথা এনে জুড়ে দিলে তবেই এই পুত্র বাঁচবে। পার্বতী তখন নন্দীকে মস্তকের সন্ধানে পাঠান। নন্দী ইন্দ্রের বাহন ঐরাবতের মাথা কেটে আনেন। দেবতারা বাধা দিয়েও ব্যর্থ হন। এই মাথাটি জুড়ে শিব পুত্রকে জীবিত করেন। শিবের বরে, ইন্দ্র ঐরাবতকে সমুদ্রে ফেলে দিলে সে আবার মস্তক প্রাপ্ত হয়।
হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী গণেশের বাহন কি ?
Ground Truth Answers: দুর এ
Prediction:
অন্যমতে, ভারতের আদিম অধিবাসীদের পূজিত হস্তিদেবতা ও লম্বোদর যক্ষের মিশ্রণে গণেশ কল্পনার উদ্ভব। অথবা এমনও হতে পারে গণেশ সম্পূর্ণ অনার্য দেবতা, পরে যাঁর আর্যীকরণ ঘটে। গণেশের বাহন ইঁদুর এই আদিম কোনও সংস্কারের প্রতীক। খ্রিস্টপূর্ব অষ্টম থেকে ষষ্ঠ শতকের মধ্যবর্তী কোনও সময়ের লেখা বৌধায়ণ ধর্মসূত্রে গণেশের উল্লেখ নেই। খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতকে কালিদাস, খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতকে ভারবি, খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতকে পঞ্চতন্ত্র বা ভরত নাট্যশাস্ত্রও গণেশের সাক্ষ্য দেয় না। গুপ্ত যুগের শেষভাগে খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতক থেকেই এঁর একক পূজা প্রচলিত হয়।
হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী গণেশের বাহন কি ?
Ground Truth Answers: ইঁদুরইঁদুর
Prediction: